এসিড দগ্ধ মেয়ের গল্প' (প্রথম পর্ব)

'এসিড দগ্ধ মেয়ের গল্প' (প্রথম পর্ব)
___সাদিয়া জান্নাত
.
সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে রুহি। এখন দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে প্রায়। আজকে তিন জায়গায় ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে আর সম্ভব নয়। দুই জায়গাতেই সব সময় শেষ হয়ে যাবে।এতদিনে অগনিত জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে।কিন্তু একটাতেও টিকতে পারেনি। নিজের প্রতি যে আত্মবিশ্বাস ছিল সেটা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে যেন। ইন্টারভিউতে টিকতে না পারার কারণ রুহি দূর্বল ছাত্রী ছিল তা নয়, বরং তার নাম তো সবসময়ই প্রথম সারিতে থাকতো। ইন্টারভিউতে না টিকার পিছনে অন্য কারণ আছে।

অনেকক্ষণ ধরে ওয়েটিং রুমে বসে আছে রুহি। যেভাবেই হোক এই ইন্টারভিউতে টিকতেই হবে। একটু পর রুহির নাম আসলো।
সে সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।দেখল মধ্য বয়স্ক একজন ব্যক্তি চেয়ারে বসে আছেন। উনিই এমডি স্যার হবেন হয়তো। স্যার রুহির দিকে তাকিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেন। রুহি বোরখা পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে। এমডি স্যার বললেন, মিস রুহি!
: জ্বী স্যার।
: বসুন।
: ধন্যবাদ স্যার।
: আপনার চেহারা দেখা যাচ্ছে না তো।কীভাবে বুঝব আপনিই মিস রুহি! দয়া করে নেকাবটা খুলে ফেলুন।
: স্যার, আমিই রুহি। আর নেকাবও খুলব তবে এখন নয়। ইন্টারভিউ দেওয়ার পর খুলব। প্লিজ স্যার, এই বিষয়ে আর কিছু না বলে আমার ইন্টারভিউ নিলে ভালো হতো!
: এটা তো আমাদের কোম্পানির রুলস না!
: স্যার আমি তো আপনাদের কোম্পানির কোনো রুলস ভঙ্গ করছি না। আমি তো শুধু চাইছি ইন্টারভিউ দেওয়ার পর চেহারা দেখাব। এমনটা করার পিছনে বিশেষ একটা কারণ আছে। প্লিজ স্যার...!

এমডি স্যার কিছু একটা ভেবে রাজি হলেন। খুব ভালোভাবে ইন্টারভিউ শেষ হবার পর স্যার বললেন, ইন্টারভিউ তো শেষ। এবার চেহারা দেখান!
: স্যার, অনুমতি দিলে কিছু কথা বলব!
: হুমম অবশ্যই, বলেন।
: স্যার, একটা কাজ চেহারার সৌন্দর্যতা দিয়ে সম্পন্ন হয় নাকি মেধা ও দক্ষতা দিয়ে?
: অবশ্যই মেধা ও দক্ষতা দিয়ে একটা কাজ সম্পন্ন হয়।
"এবার তাহলে আমার চেহারা দেখতে পারেন" বলে নেকাবটা সরিয়ে ফেলল রুহি।
রুহির চেহারা দেখে স্যার একটু ভয় পেলেন। কারণ, নেকাবের ভিতরে সাধারণ কোনো চেহারা ছিল না, ছিল একটা এসিড দগ্ধ চেহারা। স্যার কথা বলতে একটু সময় নিলেন। রুহি মাথা নিচু করে বসে থাকল। স্যার রুহির কাছে বিস্তারিত ঘটনা জানতে চাইলে রুহি বলল ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আরও লোক বাকি আছে। পরে কোনো এক সময় নাহয় শোনাব বিস্তারিত ঘটনা।
স্যার তার পিএ'কে ডেকে বললেন, ইন্টারভিউ আজকের মত এই পর্যন্তই। জানিয়ে দাও ওদেরকে। পিএ চলে গেলে রুহির দিকে তাকিয়ে বললেন এবার বলুন।
.
(চলবে.....!)

Post a Comment

1 Comments